শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন
আব্দুস সালাম, টেকনাফ
টেকনাফে পোকার আক্রমণে পঙ্গপালের আতঙ্ক তৈরি হওয়ার পর সেগুলোকে ঘাসফড়িং প্রজাতির বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদরা। শনিবার দুুুপুরে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী এলাকা পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তারা। ঢাকা থেকে সকালে টেকনাফে পৌছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটিদল।
এসময় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা:নির্মল কুমার দত্ত বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কীটতত্ত্ববিদ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা এখানে এসেছি। ইতিমধ্যে কিছু জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে টেকনাফের যে অঞ্চলটাতে পঙ্গপালের উপস্থিতি পেয়েছে। আসলে আমরা সরেজমিনে দেখলাম যে পোকাটা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এটি বিধ্বংস পোকা পঙ্গপাল নয়, যেটা আমরা ইতিমধ্যে জাতীয়ভাবে সনাক্ত করতে পেরেছি এটি একটি ঘাস ফড়িং। ইংরেজিতে (ধঁষধৎপযবং সরষরধৎরং)এটি বিভিন্ন বনজঙ্গলে এবং ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ফসলের ক্ষতিকর পোকা। এটা তেমন ক্ষতি করে না এটা নিয়ে আতঙ্ক হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি আরো বলেন, এটা অতি আগে থেকে বাংলাদেশে রেকর্ডে ছিলো পোকা। এটা আমরা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জেনেছি এটা আগে থেকেই পরিচিত একটি পোকা। স্থানীয় একজন কৃষক আমাদেরকে বলছেন এটা বর্মাচান্ডালী নামে পরিচিত? কেনও এটা বর্মা বর্মাচান্ডালী নামে পরিচিত জানতে চাইলে সেই বলেন এটা যেহেতু বার্মা থেকে এসেছে সেই জন্য এই নাম বলা হয়। আসলে আমাদেরও ধারণা এটি বার্মা থেকে আসতে পারে। এটা শুধু বাংলাদেশের রেকর্ডের না ভারত, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি দেশে উপস্থিতি আছে। সব দেশে ক্ষতিকারক পোকা হিসেবে চিহ্নিত আছে। কিন্তু আবার এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি একটি ঘাসফড়িং পোকা।
ঢাকা খামারবাড়ি উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং,উপ-পরিচালক,আই পিএম, মোঃ রেজাউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এই পোকাটা নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং দুশ্চিন্তা আমাদের কৃষি ডিপারমেন্ট সহ সারা বাংলাদেশে সবার মাঝে এটা নজরে আচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা কৃষি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের আলোচনা থেকে বুঝলাম আসলে এটা পঙ্গপাল না এটা ঘাসফড়িং এর প্রজাতি। এটা একটা অপদান পোকা। যেহেতু এখানে এ পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার এবং স্থানীয় কৃষি অফিস এটা ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করছেন। তারা সাইফার মেট্রিন জাতীয় কীটনাশক ¯েপ্র ব্যবহার করে এটি দমন করতে পেরেছে। বেশ কয়েকবার ¯েপ্র করার পর এখানে জীবন্ত একটি পোকা ও দেখা যায়নি। সর্বোপরি এখানে আশে পাশেও এই পোকার আক্রমণের কোনকিছু দেখা যায় নাই। প্রত্যেকটি ব্লগে যেন মনিটরিং করে দেখা হয়। কোন গাছে, সবজি বা ধান খেতে এই পোকা পাওয়া যায় কিনা। যদি এই পোকা পাওয়া যায়, তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবে। যেহেতু দমন ব্যবস্থা খুব সহজ, সাইফার মেট্রিন জাতীয় বালাইনাশক ¯েপ্র করলে এটা দমন হয়ে যায়। চিন্তার কোন কারণ নেই, যদি বেশি পরিমাণ পোকা দেখা যায়। তখনই আমরা এই সাইফার মেট্রিন জাতীয় কীটনাশক ¯েপ্র করলে দমন করা সম্ভব। এটা পঙ্গপাল নয়, এটা ঘাসফড়িং এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। এরপরও পোকার নমুনা সংগ্রহ ঢাকা গবেষণাগারে নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা ও মনিটরিং রেখেছি যাতে এটা ব্যাপক ভাবে অন্য কোথাও আর্বিভাব না হয়।
কক্সবাজার জেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী পরিচালক মো: আবুল কাশেম জানান, পঙ্গপাল বলে প্রচার হওয়ায় দ্বিতীয় বারের মত পরিদর্শন করেছি। এগুলো পঙ্গপাল নয়। কীটনাশক স্প্রে করার পর পোকা নেই। এ ধরনের পোকার ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। একই সাথে জাতিসংঘের ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের ৩ জন কর্মকর্তা পরিদর্শন করেছেন।
টেকনাফ বাগান মালিক সোহেল সিকদার জানান, কিটনাশক ছিটানোর পর এসব পোকা মরে যায়। দুপুরে কৃষি বিভাগ থেকে একটি টিম এসে যাচাই করে। এ সময় কিটনাশক স্প্রে করা হয়। এসময় কিছু পোকাও সংগ্রহ করেন তারা।
উল্লেখ্য টেকনাফের লম্বরী গ্রামের একটি বাড়ির আম গাছসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের শাখা-প্রশাখায় সম্প্রতি দেখা মিলে এক ধরনের এ পোকা। পোকাগুলো গাছের পাতা স¤পূর্ণ রূপে খেয়ে ফেলছে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এলে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। কৃষি বিভাগও নড়ে চড়ে বসে।
ভয়েস/আআ